সৃষ্টি সুখের সে জীবন অন্য কারো
– অতীশ দীপঙ্কর
যদি আধুনিকতার বড়াই করে এভাবে বলতেই থাকি
দালান পুষ্করণী আমরাই সৃষ্টি !
যদি দাবি নিয়ে আসে আদিম কোন মানুষ
চাকা আগুন ও এই সভ্যতার শেকড় তাদের সৃষ্টি !
তবে তা হবে ধ্রুব তারার মতো
যেমন কলেবরে বিজ্ঞান,সত্য তার নবনব কলরব।
সৃষ্টি পৃথিবীর মতো গোলাম নয়!
সকল সৃষ্টি আতস কাঁচ অথবা কষ্টি পাথরও নয়
ধান ভানা হচ্ছে এত সব কী খুদ কুড়ো চাল?
শক্তি লুকিয়ে রাখা আধার চুর্ণ হচ্ছে ভাঙা টুকরোয়
তাতেই লেখা থাকছে জন্ম ও মৃত্যু।
ধান ভানতে শিবের গাজন লুকিয়ে রাখছে ধ্বংস!
সৃষ্টি যদি করছে তবে তা একমাত্র মাটির জালা চাষা
ও বালিকার খুলে যাওয়া লজ্জিত বেণী।
সবার উপরে মানুষ সত্য জীবন খামাড়ের হাড়ভাঙা পরিশ্রম
তবুও মজুর জীবন সিধে সরল কিন্তু কেঁচো নয়।
খুঁচিয়ে স্বপ্নরাগ ঢালে ফসলে
দরদরিয়ে ঘামের ভীষণ দৃপ্ত সে শৌর্য
বীর্য নিষিক্ত সঙ্গমে সার্থক হচ্ছে অঘ্রাণের নবান্ন!
কচি ধানের যোনি নিষ্কাম পরাগের মিষ্টি গন্ধ
লাজে রাঙা ধানশীষ ঘোমটা জোছনা সোনালী লাভা
তাই আহ্লাদে আহ্লাদে চাষা সোহাগে তার বুক ভরা দূধ চুষে খায়
মাঠে হাজার হাজার সবুজ পাতা একমাত্র সংহতির শুভ্রতা।
যারা বড়াই করে দল বাঁধল
ঘরের এক কোনে বা সেই কবেকার শ্যাওলা নাচে
কখনও আবার হাটে হাটে কবিতায় ফেরিওআলা ও ঝুড়ি!
একবারও কী ভাবনায় আসে?
কেরাণীর কাজ ছাড়া কী এমন কাজ করেছি!
অফিসে চাষার মূল্য চোকাতে হিসেব রাখছি!
সভ্যতার বিজ্ঞান বিভাজন বিয়োজন পড়াচ্ছি,
দম পাচ্ছে সচল অচল ঘড়ির কাঁটা ও পুতুলগুলো
ঘোরালে নড়ালে চড়ালেও সকলে সচল নয়।
মাটির গন্ধ খুঁড়ে আদ্যোপান্ত সচল হালচষা নাঙলা
আদিম ডুঙিতে জল সেঁচে মেথি বেরিয়ে থাকা নেংটি পরা মজুর
যে কখনও সোনা দানা ভাগ পায় না !
গুপ্তধন হদিস দিচ্ছে গতর ছিঁড়ে
যৌবন তার ভেজাপোড়া সংসার জ্বর!
সে কখনও দাবি করে নি পৃথিবীর মস্ত জোগাড়ে
আলপথ বেয়ে রোগা ছেলেরা অভ্যস্ত ঢঙে হেঁটে যায়
কখনও জিজ্ঞেস করলে তারা বলে না সুর্যাস্ত দেখতে যাচ্ছে।
মানুষের মাথায় মুরুব্বিয়ানায় এত কেরাণী
সৃষ্টির এই নদী সমুদ্র মাটি পাথর সবুজই পৃথিবী
আকাশ দিয়েছে বুকপেতে তাকে
তবুও আমপাতার একটা নতুন জামা হয় না
সৃষ্টি অবিশ্রান্ত নেশা মাতায় চাষার বৃক্ষ
ফুল নদী পাখি ঘাসের জীবনে।
সৃষ্টির দাবি নিয়ে বারবার আসা দাবিদার
আসলে তা চাঁদের বুকে সৃষ্টি কোন পাথর
ধ্বংসের সাথী পরগাছা অথবা অন্য জলের উদ্ভিদ,
সৃষ্টি সুখের সে জীবন অন্যকারো।।